অপরিচিত থেকে কাছে আশা
–আমাকে বলছেন?
-প্লিজ, আমার সাথে একটু চলুন!
-কোথায়?
-কাজী অফিস।
অপরিচিত থেকে কাছে আশা
এবার আমি মুখ ঘুরে মেয়েটির দিকে তাকালাম।বউ সেজে রিকশায় একা বসে রয়েছে।পুরো দেহ জুড়ে লাল বেনারসি শাড়ি।ভালো করে পড়তে পারেনি।তবে চেহারার উজ্জ্বলতার কারনে তা ধরা পড়ছে না।
-আপনি কি আমাকে চিনেন?
-না।
-আমিও তো আপনাকে চিনি না।
-এইজন্যেই তো বলছি,আমার সাথে একটু কাজী অফিস চলুন।
-আমার কি কাজ ওখানে?
-আমার যা কাজ, আপনারও সেই কাজ।বিয়ে করতে যাচ্ছি,সাঁজ দেখেই তো বুজতে পাচ্ছেন।এখন চলুন আমার সাথে।আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে।
মেয়ের আচার-আচরণ দেখে তো স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না।আবার সাঁজ গোজ দেখেও মনে হচ্ছে না যে কোনো মানসিক হাসপাতাল থেকে এসেছে।
অপরিচিত থেকে কাছে আশা
অনেক জোড়াজুড়ির পর আমি রিকশায় উঠতে লাগলাম।
-এই আপনি রিকশায় উঠছেন কেন?
-আপনিই তো বললেন কাজী অফিস যেতে!
-হ্যা,কিন্তু রিকশায় তো উঠার অনুমতি দেই নি।
-তাহলে কীভাবে যাব?
-হেঁটে যাবেন।আমিও হেঁটে যাব।আপনাকে চিনি না,আপনার সাথে রিকশায় কেন যাব?
-ও,আচ্ছা।
মেয়েটি রিকশা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলো।আমিও সাথে পা মিলিয়ে চলতে লাগলাম।
মেয়েটি বললো,
-আপনার কাছে কি কিছু টাকা হবে?
-কেন?
-দুইটা মালা কিনা দরকার।সামনের দোকান থেকে মালা নিয়ে আসুন।
-আপনার ইচ্ছে হলে নিজের টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসুন।
-আপনার কাছে কত টাকা হবে?
-হাজার দুই-এক হবে।
-তাহলে মালা কিনে টাকা নষ্ট করার কোনো দরকার নেই।পরে দরকার পড়বে টাকার।আপনার নামটাই তো বললেন না?
-সাব্বির ।
-সাব্বির !ভালো নাম?
-খারাপের কি দেখলেন!
-শুধু সাব্বির ?
-সাব্বির হোসাইন।
কথা বলতে বলতে কাজী অফিস পৌঁছে গেলাম।
আমাদের যাওয়ার আগেই সেখানে কোর্ট প্যান্ট পড়া একজন উপস্থিত।বয়স পয়ত্রিশ এর আসে পাশে।ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের অপেক্ষায় রয়েছেন।
মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-আমাকে এখানে ডাকলে কেন,নিশা?
-আজকে আমার বিয়ে।ভাবলাম আপনাকে জানানো দরকার।আর ও আমার বয়ফ্রেন্ড সাব্বির ।ওকেই বিয়ে করছি।
অপরিচিত থেকে কাছে আশা

-শুনে ভালো লাগলো।তোমাদের জন্য শুভকামনা। লোকটি আমার সাথে করমর্দন করে অফিস ত্যাগ করতে লাগলেন।মেয়েটি পিছন থেকে বলতে লাগলো,
-আপনি চাইলে পুরো বিয়েটা দেখে যেতে পারেন।
লোকটি না শুনার ভাব ধরে যেতে লাগলেন।
আমি মেয়েটিকে বললাম,
-আমার ধারনা আপনি আমাকে যে কাজের জন্য নিয়ে এসেছিলেন তা হয়ে গেছে।
-আপনার ধারনাটা কি?
-এই লোকটার সাথে আপনার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু আপনি ওনাকে পছন্দ করেন না।তাই বিয়ে ভাঙার জন্য আমাকে ব্যবহার করেছেন।
-আপনার ধারনায় কিছু ত্রুটি রয়েছে।বিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যেই হবে।
-কার সাথে?
-আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে।
-তাহলে আমাকে নিয়ে আসলেন কেন?
-আমি আপনার মতোই একটা মুরগী খুঁজছিলাম। এই শহরে তো আর মুরগীর অভাব নেই।এখন মানিব্যাগটা আমার হাতে দিয়ে এখান থেকে বিদায় হোন।
-আমি আপনাকে মানিব্যাগ দিব কেন?
-না দিলে চেঁচামেচি শুরু করব।মানুষকে বলব,আপনি জোর করে এখানে নিয়ে এসেছেন।
-প্রমান কি?
-একটা মেয়ের চেঁচামেচি শুনার পর আর কেউ প্রমান জানতে চাইবে বলে মনে হয় না।মানিব্যাগ দিবেন নাকি শুরু করবো?
আমি মেয়েটির হাতে মানিব্যাগটা দিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।শুধু এইটুকু ভেবে শান্তি পাচ্ছি যে,মান-সম্মানের ভয়ে মেয়েটিকে বলেছিলাম মানিব্যাগে হাজার দুইয়েক টাকা।ভেতরে শুধু বিশ টাকার একটা নোট রয়েছে যা দুই তিনবার চেষ্টা করেও চালাতে পারিনি।
লেখক
সাব্বির হাসান
অর্থনীতি বিভাগ
হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় ।