মধ্যবিত্তের স্বপ্ন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা শেষ করে দেখলাম পকেটে ১৫০ টাকা, এদিকে পেটের ভিতর ইদুর দৌড়াচ্ছে,
অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু খেতেও পারলাম না, এর মাঝে যে গেট দিয়ে ঢুকে ছিলাম পরিক্ষা দিতে ভুলক্রমে রাস্তা হারিয়ে পুরো
ক্যাম্পাস ঘুরেছিলাম, বার বার ঘুরে ঘুরে একজায়গায়ই আসছিলাম, আমার এই অবস্থা দেখে এক বড় ভাই নিজে গেটে দিয়ে
এসেছিলেন, আজ ২ বছর পর ভাইটার নাম মনে করতে পারছিনা, তারপর ওখানকার বাস কাউন্টার থেকে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে
গাবতলী বাস টার্মিনালে,সেখান থেকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাধ ১০ টাকা লেগুনায়, সেখান থেকে আমার হোস্টেলর দূরত্ব পায়ে
হেটে গেলে ঘন্টাখানেক সময় লাগবে, এ মাসে বাড়ি থেকে টাকা পাঠায়নি,,তাই আমি চাচ্ছিলাম না ১০০ টাকা ভাংতে, বাড়ি থেকে
গত পরশু বলা হয়েছে পরিক্ষা শেষ হলেন যেন বাড়ি ফিরি, আমার পিছনে তারা আর একটা টাকাও ফুরাবে না, এদিকে ক্ষুধার
মধ্যবিত্তের স্বপ্ন

তারনায় পা চলছে না, তবুও তো যেতে হবে গত রাতে বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার অবস্থা একদম খারাপ তাও আবার ঢাকার রাস্তা বলে
কথা, অনেক কষ্টে হোস্টেলে পৌছালাম পা ভর্তি কাঁদা নিয়ে, নিচ তলার কাপুড় ধোঁয়ার স্থান থেকে এক বন্ধুর ডাক কিরে পরিক্ষা
কেমন হলো , অনিচ্ছা সত্ত্বেও বললাম ভাই আপাততঃ পেটে কিছু পরে নি আগে পরুক তারপর শুনিস, রুমে প্রবেশ করতেই
দেখলাম রুমমেটের মধ্যে ১ জন পড়তেছে আর ২ জন ঘুমাচ্ছে, এডমিট কার্ড এর ফাইল রেগে সিধে চলে গেলাম বর্ডার রুমে,
মধ্যবিত্তের স্বপ্ন
গিয়ে দেখি ভাত এখনো আছে সাথে ব্রয়েলারের তরকারি, নিয়ে চলে এলাম রুমে এসেই গ্রোগাসে গিলতে লাগলাম, কতটা ক্ষিধা
লেগেছিল ভাবতেও পারবো না, রাতে ভাবতে লাগলাম কাছে ১০০ টাকা আছে, এখান থেকে আমার যে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলে
ওজন হবে মন খানেক, বসিলা থেকে এয়ারপোর্টে ষ্টেশনে ভাড়া ৪০ টাকা প্রজাপতি বাসে। টাকার সংকট থাকায় বের হলাম ধার
করতে,পাশের রুমে থাকা এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নিলাম ১০০ টাকা, আরো এক বন্ধুর কাছ থেকে ৫০টাকা, খুব ভোরেই ঘুম
থেকে উঠে সবকিছু গুছিয়ে নিলাম ১০: ১০ এ একতা ট্রেন, সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, বস্তায় ভরা ব্রেডিং মাথায় তুলে রওনা
দিলাম, বাসে উঠতেই চেনা এক কন্টেকটারের সাথে দেখা, আরে মামা আপনি বাড়ি যাচ্ছেন নাকি, বললাম হ্যা মামা, এই
লোকটার সাথে কোচিং এর সময় পরিচয় প্রতিদিনই তাদের বাসে করেই যেতাম। ভাড়া দিতেই ৩০ টাকা রাখলো ভাড়া ছিলো ৪০
টাকা বুঝলাম, এর মধ্যে বাস মিরপুর ছেড়েছে, রাস্তায় প্রচন্ড য্যাম থাকায় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯:০০ টা , এখনো অনেক
মধ্যবিত্তের স্বপ্ন
পথ বাকি, তার উপর প্রচন্ড বৃষ্টি, সবকিছুর পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে ষ্টেশনে, ঘড়িতে সময় ১০ঃ০৫ মিনিট, হাফ টিকিট
করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেন, সর্বশেষে ট্রেন উঠলাম, ট্রেনের দরজার পাশে বেডিংএর বস্তা রেখে তার উপরেই বসে পড়লাম।
খানিক বাদে লক্ষ্য করলাম মোটাফ্রেমের চশমা পড়িহিত এক সুন্দর রমনী যশোর বিঃপ্রঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ব্যাংক পড়ছে,
ভাবতেই কিছুটা মুচকি হাসলাম, ট্রেনের জানালার পাশে বাসায় রমনীর চুল গুলো বার বার উড়তে ছিলি মেয়েটা যতই ঠিক করছে
ততোই এলোমেলো হচ্ছে। ট্রেনের এটেন্ডেন্সের কথায় হুশ ফিরলো আমার, এতোক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, মামা
টিকিট, ব্যাগ থেকে টিকিট টা বের করে সাইন করিয়ে নিলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই। হাবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়ার দিন
মেয়েটাকে কাকতালীয় ভাবে দেখেছিলাম, খুব ভালো লাগছিল মনে মনে, তারপর ক্যাম্পাসে মেয়েটাকে কত খুজেছি আর দেখা
হয়নি, লক ডাউনে বাড়িতে থাকায় মেয়েটার চেহারা আর মনে করতে পারছিনা, দেখা হলেও চিন্তে পারবো না মনে হয়।
